তাড়িতচৌম্বক বিকিরণের ৪০০-৭০০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট বিকিরণকে বলা হয় দৃশ্যমান আলো। এটা তো আমরা সকলেই জানি। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, দৃশ্যমান বিকিরণের এই রেঞ্জের ভিতরের আলো টুকু নিজে অদৃশ্য। অথচ এই অদৃশ্য আলোই আমাদের দেখার অনুভূতি সৃষ্টি করে।
আমরা জানি, বাহ্যবস্তু থেকে আলো যখন আমাদের চোখে এসে পৌঁছায়, ঠিক তখনই বস্তুটি সম্পর্কে আমি অবগত হই। অর্থাৎ আমাদের দর্শনের অনুভূতি কার্যকর হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, আমরা যখন কোনো বস্তু দেখি সেটা কি তখন, ঠিক সেই মুহূর্তের অবস্থায়ই দেখি, নাকি অতীতের কোনো একটা অবস্থায় দেখি?
প্রশ্নটা একরকম উদ্ভট মনে হচ্ছে, তাই তো? একটু ভিন্ন রকমই মনে হতে পারে। তাহলে আসল ঘটনাটা কি, সেটা জেনে আসা যাক।

আলো একটি তাড়িতচৌম্বক বিকিরণ, এটি সঞ্চালিত হতে কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। সৃষ্টিজগতে এখন পর্যন্ত আলোর বেগই সর্বোচ্চ। সেই বেগটা হচ্ছে প্রতি সেকেণ্ডে ১,৮৬,০০০ মাইল বা ৩,০০,০০০ কি.মি.। আলোর এই নির্দিষ্ট বেগের জন্য কোনো বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করতে অবশ্যই সে একটা সময় নেয়। আমরা অনেকেই জানি যে, আলোকবর্ষ নামে দূরত্বের একটা এককও রয়েছে যেটা আলো ১ বছরে কত দুরত্ব অতিক্রম করে সেটার ওপর ভিত্তি করে একক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ ১ আলোকবর্ষ দূরে বলতে, শূণ্যমাধ্যমে আলো ১ বছরে যতদূর পথ অতিক্রম করে সেটাকে বোঝানো হয়। কিলোমিটার হিসাবে যেটা 9460730467457 কিলোমিটার হবে আর কি।

সূর্য থেকে পৃথিবী।

যাইহোক, এবার যে কথাটি বলবো সেটি শুনলে হয়তো আপনিও একটু অবাক হবেন। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে প্রায় ৮ মিনিট ২০ সেকেণ্ড সময় লাগে। কাজেই আমরা যখন সূর্যের দিকে তাকাই, তখন আমরা কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তের সূর্যকে দেখি না। আমরা দেখি ৮ মিনিট ২০ সেকেণ্ড আগের সূর্যকে। ঠিক সেই মুহূর্তের সূর্যকে দেখার জন্য আমাদের আরো ৮ মিনিট ২০ সেকেণ্ড অপেক্ষা করতে হবে। এর কারণটা তো স্বাভাবিক। পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যকার দূরত্ব অতিক্রম করতে আলোক রশ্মির ৮ মিনিট ২০ সেকেণ্ড সময় লাগে। এবার প্রশ্ন হচ্ছে, কোনো এক অদ্ভুত কারণে যদি হঠাৎ যেকোনো মুহূর্তে সূর্য অদৃশ্য হয়ে যায় তাহলে কি তখনই আমরা সেটা বুঝতে পারবো? না, আমরা এর ঠিক ৮ মিনিট ২০ সেকেণ্ড পর বুঝতে পারবো যে, সূর্য এখন অদৃশ্য হয়ে গেছে।

একইভাবে, আমরা যখন রাতের আকাশের দিকে তাকাই, তখন অসংখ্য নক্ষত্র মিট মিট করে জ্বলতে দেখি। সেটা কিন্তু মোটেও সেই মুহুর্তের নক্ষত্র নয়। সেটা কত দূরে আছে তার উপর নির্ভর করবে নক্ষত্রটি কত মিলিয়ন বা বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে। আমরা যখন আমাদের সবচেয়ে কাছের গ্যালাক্সি এন্ড্রোমিডা-কে দেখি, সেটি প্রায় ২.৫ মিলিয়ন বছর আগের। অর্থাৎ ২.৫ মিলিয়ন বছর আগে এন্ড্রোমিডা-টি কেমন অবস্থায় ছিলো সেটা দেখতে পাচ্ছি। এখন তাহলে আমাদের গর্ব করা উচিত যে, আমরা ২.৫ মিলিয়ন বছর আগের অতীতকেও দেখতে পারি।