মাইন্ডফুলনেস কি?

(Mindfulness) শব্দটি আজকাল একটি ট্রেন্ডের মতো বা অনেক ক্ষেত্রেই আমরা বিভিন্ন মানসিক সমস্যার একটি সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে দেখতে পাচ্ছি।

আবার অনেকেই হয়তো এই শব্দটির সাথে পরিচিত নন। আজকেই হয়তো নতুন শুনছেন। যাই ই হোক না কেন ব্যক্তিগতভাবে কিন্তু আমি এই মাইন্ডফুলনেসের অনেক পাংখা আই মিন ফ্যান আর কি!

তাহলে শুরুতেই আমি সহজে বোঝানো যায় সেরকম একটি সংজ্ঞা প্রদানের চেষ্টা করতে পারি। যেহেতু আগেই বলেছি আমি ব্যক্তিগতভাবে এই পদ্ধতিটির ভক্ত।

মাইন্ডফুলনেস বলতে সাধারণত ইংরেজিতে যা বোঝায় তা হলো- “being mindful” অর্থাৎ বর্তমানে উপস্থিত থাকা। আপনি যেই মুহুর্ত বা কাজে এখন রয়েছেন সেই কাজের মুহুর্তগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা।

যদি খুব বেশি জটিল বলে মনে হয় এতটুকু পড়ার সময়, সেক্ষেত্রে বলি; অনেক সময় ই আমরা দৈনন্দিন কাজগুলো অভ্যাসগত ই করি কিন্তু সেই কাজটি করার সময় আমরা কি করছি সেই মুহুর্তগুলো অনুভব করি না। অবচেতন মনেই কাজ করে যাই।

কিভাবে আপনি মাইন্ডফুল থাকতে পারেন?

ছোট্ট একটি উদাহরণ দেই।

আপনি সকালে উঠে দাঁত মাজছেন। যেটা ঘুম থেকে উঠে আপনার প্রতিদিনের অভ্যাস। কখনো হয়তো অভ্যাসবশত ই কাজটি করে শেষ করছেন কখনো বা ঘুম ঘুম চোখে অফিসে যাওয়ার তাড়াহুড়ায় দাঁত মেজে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে চোখের ঘুম তাড়াচ্ছেন।

এই কাজটিতেই আপনি মাইন্ডফুল থাকতে পারেন। যখন আমি আপনার বর্তমানের সব ইন্দ্রিয়গুলোকেই এই কাজে সক্রিয় করে তুলতে পারেন। সচেতনভাবে আপনি হাত দিয়ে ব্রাশ স্পর্শ করলেন, তাতে টুথপেষ্ট লাগালেন। ব্রাশের হাতল শক্ত, টুথপেস্টের টিউব নরম। তারপর দাঁত মাজা শুরু করলেন, সচেতনভাবে লক্ষ্য করছেন প্রতিটি দাঁতে ব্রাশের ব্রিসলের ঘর্ষণ। হালকাভাবে প্রতিটি দাঁতের কোণায় কোণায় পরিস্কার করলেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন, পেস্টের ফ্লোরাইড কাজ করুক। তারপর মাউথওয়াশ পরিমাণমতো নিয়ে মুখ কুলি করে নিন আবার সেটা অনুভব করে।

এভাবে প্রতিটি কাজ করার সময় শুধু সেই কাজটিই ইন্দ্রীয় দিয়ে অনুভব করতে থাকুন। এটিই মাইন্ডফুলনেস।

মাইন্ডফুল থাকতে পারছেন না? কাজের মাঝখানে অন্য কোনো দুশ্চিন্তা বা ওভারথিংকিং এ হারিয়ে যাচ্ছেন?

কোনো অসুবিধা নাই। অনুশীলন করতে করতে ঠিক এই অভ্যাস আয়ত্ত্বে আনতে পারবেন। যখন ই অন্য কোনো দুশ্চিন্তা, স্ট্রেস বা ওভারথিংকিং করার মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করবেন তখনই নিজেকে বর্তমানে আনুন। আপনি মাইন্ডফুল থাকতে শিখবেন। আপনার কাজের মান বাড়তে থাকবে দিন দিন।

আমি প্রথমে “conscious” নামক অ্যাপ দিয়ে মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করা শিখি। পরে আর এটির সাহায্য প্রয়োজন হয় নি আমার। গুগলে এটি এখন আর পাওয়াও যায় না দেখেছি।
অ্যাপটির কাজ ছিলো প্রতিদিন আমাকে একটি নির্দিষ্ট কাজের ক্ষেত্রে মাইন্ডফুল থাকার “টাস্ক” দেওয়া।
যেমন- যতবার আমি ঘরের দরজা দিয়ে বের হচ্ছি ততবার সচেতন হয়ে মাইন্ডফুল হওয়া, যতবার হাঁটছি পায়ের পাতায় কেমন চাপ পড়ছে তা অনুভব করা ইত্যাদি।

এই কাজ করতে গিয়ে আমি একদিন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসের পর মেইন গেইটে গাড়িতে না গিয়ে প্রতি পায়ের পাতায় পড়া চাপ অনুভব করার জন্য প্রায় ৪৫ মিনিট সচেতনভাবে হেঁটেছিলাম।

মাইন্ডফুলনেসের সুবিধা হলো এই কাজের অনুশীলনে দিনে আপনাকে কোনো আলাদা সময় বরাদ্দ রাখতে হবে না। আপনি যখন যেই কাজ করেন শুধু সেই কাজটিতেই আপনার পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে নিজের কাজে নিজে ডুবে থেকে কাজটি করতে পারবেন৷ সেইসাথে আপনাকে চুপচাপ থাকা শিখতে হবে। কারো কোনো কাজে কোনো রিএক্ট বা জাজমেন্ট না করে শুধু পর্যবেক্ষণ করতে শিখুন। অনেক নতুন নতুন উদ্দীপক আবিষ্কার করবেন আপনার দৈনন্দিন কাজের পরিবেশে।

এটাও মানসিকভাবে অনেক প্রশান্তি এনে দেয়।
নিজেকে স্পঞ্জ মনে করুন। চারদিক পর্যবেক্ষণ করে ভালো চিন্তা বা কাজগুলো নিজের ভেতর নিয়ে অভ্যাস করুন আর অন্যের যে কাজ খারাপ মনে হবে সেটা নিজের ভেতরেও যখন আবিষ্কার করবেন তখন সেই কাজ না করায় আস্তে আস্তে নিজেকে শুধরে নিন।

মাইন্ডফুলনেস এভাবেই আপনার মানসিক ও আচরণগত দিকগুলোকে আস্তে আস্তে উন্নত করতে সহায়তা করবে।